পড়তে ইচ্ছে না করলে কি করবেন: কার্যকর টিপস এবং কৌশল

হাতের লেখা আকর্ষণীয় করার ৭ টি গোপনীয় টিপসপড়াশোনা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও কখনো কখনো পড়তে ইচ্ছে না করার সমস্যায় পড়া স্বাভাবিক। এটি হতে পারে মানসিক ক্লান্তি, অনুপ্রেরণার অভাব, বা সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা শিখলে এটি কেবল ভালো ফলাফলের পথ খুলবে না, বরং ব্যক্তিগত দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

পড়তে_ইচ্ছে_না_করলে_কি_করবেন

জ্ঞানার্জনকে আকর্ষণীয় করে তোলা এবং মনোযোগ বাড়ানোর কিছু কৌশল জানা প্রয়োজন। এই কৌশলগুলো আপনাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে সহায়তা করবে। পাঠ্যজীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাস গড়ে তোলাই মূল চাবিকাঠি।

পেইজ সূচিপত্র : পড়তে ইচ্ছে না করলে কি করবেন: কার্যকর টিপস এবং কৌশল

পড়তে ইচ্ছে না করলে কি করবেন: কার্যকর টিপস এবং কৌশল

পড়াশোনা মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে অনেক সময় মানসিক চাপ, অবসাদ বা মনোযোগের অভাবে পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নয়, সকলের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা। এই প্রবন্ধে আমরা পড়তে ইচ্ছে না করলে কী করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করব। এখানে থাকবে বিভিন্ন কার্যকর টিপস এবং কৌশল যা আপনার মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট

  • একসাথে বড় লক্ষ্য স্থির করলে চাপ বেড়ে যেতে পারে। এর পরিবর্তে প্রতিদিন ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, যেমন ৩০ মিনিটের জন্য একটি অধ্যায় পড়া। এতে আপনি কাজ সম্পন্ন করার সময় আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আগ্রহ ফিরে আসবে। ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে মানসিক চাপ কমে এবং পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
  • একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা শুরু করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সময় নির্ধারণ করলে শরীর ও মন পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। সকালে বা রাতে যেকোনো সময় আপনি পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটি ঠিক করুন। এটি মনোযোগ ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • একঘেয়েমি কাটাতে মাঝে মাঝে পড়ার স্থান পরিবর্তন করুন। একদিন ঘরের কোণে বসে পড়ুন, আরেকদিন ছাদে বা বারান্দায়। পরিবেশ পরিবর্তনের মাধ্যমে মন সতেজ থাকে এবং পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। একটি সুশৃঙ্খল এবং শান্ত পরিবেশ আপনার পড়ার অভ্যাসকে আরও কার্যকর করে তুলবে।
  • মোবাইল, টিভি বা অন্য যেকোনো প্রযুক্তিগত ডিভাইস পড়ার সময় থেকে দূরে রাখুন। এই জিনিসগুলো মনোযোগ ভাঙার অন্যতম কারণ। প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকলে পড়ার প্রতি মনোযোগ আরও বাড়ে।
  • একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করুন এবং প্রতিদিন সেটি অনুসরণ করুন। রুটিনের মাধ্যমে আপনি কোন সময় কী পড়বেন তা জানবেন এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবেন। এটি আপনাকে পড়ায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
  • মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খান। যেমন বাদাম, মাছ, ডিম, এবং ফল। এগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। পড়ার প্রতি আগ্রহ হারানো একটি স্বাভাবিক বিষয়।

সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। উপরোক্ত টিপস এবং কৌশলগুলো অনুসরণ করলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে পারবেন। মনে রাখবেন, ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং ইতিবাচক মনোভাবই আপনাকে সফলতার পথে নিয়ে যাবে।

পড়তে ইচ্ছা করে না কেন: বৈজ্ঞানিক এবং সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষণ

পড়াশোনার প্রতি অনীহা একটি সাধারণ সমস্যা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার সাথে জড়িত। পড়তে ইচ্ছা না করার পেছনে নানা বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা পর্যায়ক্রমে সেই কারণগুলো তুলে ধরব।

  • ডোপামিন নিঃসরণের ঘাটতি (Lack of Dopamine): ডোপামিন হল একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের আনন্দ এবং কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়। যখন কোনো কাজ উত্তেজনাপূর্ণ বা আনন্দদায়ক মনে হয়, তখন মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে। তবে, পড়াশোনা যদি বিরক্তিকর বা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, ডোপামিন নিঃসরণের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়।
  • কর্টিসল হরমোনের উচ্চতা (High Cortisol Levels): মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের সময় কর্টিসল নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে (যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়) প্রভাব ফেলে। এর ফলে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং পড়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।
  • মস্তিষ্কের ক্লান্তি (Mental Fatigue): অতিরিক্ত কাজের চাপে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের নিউরোনগুলো একটানা কাজ করার ফলে এনার্জি লস করে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মনোযোগ ধরে রাখতে বাধা দেয়। দীর্ঘ সময় পড়াশোনার চেষ্টা মস্তিষ্কে ক্লান্তি তৈরি করে এবং পড়তে ইচ্ছা কমিয়ে দেয়।
  • ঘুমের অভাব (Sleep Deprivation): পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। ঘুমের ঘাটতির কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, মনোযোগ কমে যায় এবং পড়ার আগ্রহ হারিয়ে যায়।
  • সেরোটোনিনের অভাব (Low Serotonin Levels): সেরোটোনিন একটি হরমোন যা মানসিক স্থিতি এবং সুখ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে যায়, তখন বিষণ্নতা এবং উদাসীনতা তৈরি হয়। এর ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায় এবং ব্যক্তি একধরনের শূন্যতা অনুভব করে।
  • মনোযোগের অভাব (Lack of Focus):  মস্তিষ্কের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ না করলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) বা মনোযোগের ঘাটতির সমস্যায় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে কম কার্যক্রম দেখা যায়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে বাধা দেয় এবং পড়তে ইচ্ছা করে না।
  • বিষণ্নতা (Depression): বিষণ্নতার সময় মানুষের জীবন সম্পর্কে আগ্রহ কমে যায়। বিষণ্নতায় সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের নিঃসরণ হ্রাস পায়, যা মানসিক শক্তি এবং উদ্দীপনাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে পড়ার ইচ্ছা একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত তথ্যের চাপ (Information Overload):  একসঙ্গে অনেক তথ্য পড়ার চেষ্টা মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। একবারে অতিরিক্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণে হিপোক্যাম্পাস (মস্তিষ্কের স্মৃতি সংরক্ষণকারী অংশ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ক্লান্তি তৈরি করে এবং পড়তে ইচ্ছা নষ্ট করে।
  • অব্যবস্থিত সময়সূচি (Irregular Schedule):  অনিয়মিত পড়াশোনার সময়সূচি মস্তিষ্কে অস্বস্তি তৈরি করে। মস্তিষ্ক একটি নির্দিষ্ট রুটিনে কাজ করতে অভ্যস্ত। যখন রুটিনে ব্যাঘাত ঘটে, তখন মস্তিষ্কে ক্যাটেকোলামিন (স্ট্রেস হরমোন) বৃদ্ধি পায়, যা পড়ার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে।
  • অনুপ্রেরণার অভাব (Lack of Motivation):  নিজের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের অভাব পড়াশোনার আগ্রহ কমিয়ে দেয়। মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পেলে সক্রিয় হয়। যদি পড়ার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য পরিষ্কার না থাকে, তবে মস্তিষ্ক পড়াশোনায় আগ্রহ হারায়।

পড়তে ইচ্ছা না করার সমস্যাটি জটিল তবে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য। এটি মূলত মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এবং মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে সঠিক জীবনধারা, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং পড়াশোনার রুটিনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এই ব্যাখ্যাগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন আমরা পড়তে অনীহা বোধ করি এবং তা কাটিয়ে উঠতে কীভাবে পদক্ষেপ নিতে পারি।

কি করলে পড়তে ইচ্ছা করবে

১. মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ানো: ডোপামিন হল মস্তিষ্কের একটি আনন্দ এবং প্রেরণার হরমোন। যখন আমরা ছোট ছোট কাজ সফলভাবে শেষ করি, তখন মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে। এটি আমাদের আরও কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। পড়াশোনার লক্ষ্য ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন। প্রতিটি অংশ শেষ করার পর নিজেকে পুরস্কৃত করুন, যেমন একটি প্রিয় স্ন্যাকস খাওয়া।

২. স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন: স্ট্রেস মস্তিষ্কের কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়। মেডিটেশন কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে শিথিল করে। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট মেডিটেশন করুন। পড়ার আগে কয়েকবার গভীর শ্বাস নিন।

৩. নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করা: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয় এবং মনোযোগ নষ্ট হয়। ঘুম মস্তিষ্কের নিউরোনগুলোকে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন।

৪. পমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করা:  পড়ার সময় দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। পমোডোরো টেকনিকের মাধ্যমে মস্তিষ্কের মনোযোগ এবং বিরতির মধ্যে ভারসাম্য রাখা যায়। এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ২৫ মিনিট পড়ুন, ৫ মিনিট বিরতি নিন। ৪টি সেশন শেষে ১৫-২০ মিনিটের বড় বিরতি নিন।

৫. সঠিক পরিবেশ তৈরি করা: পরিবেশ মনোযোগ এবং পড়ার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে। একটি নিরিবিলি এবং পরিপাটি পরিবেশ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সহায়ক। পড়ার জায়গাটি পরিষ্কার এবং নিরিবিলি রাখুন। সঠিক আলো এবং আরামদায়ক আসন নিশ্চিত করুন।

৬. প্রিয় বিষয় দিয়ে শুরু করা: প্রিয় বিষয় বা সহজ বিষয় দিয়ে শুরু করলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। প্রিয় বিষয় পড়ার সময় মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা পড়ার আনন্দ বাড়ায়। পড়ার শুরুতে সহজ বা প্রিয় বিষয় বেছে নিন। কঠিন বিষয় পরে পড়ুন।

৭. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা: খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। বাদাম, ফল, শাকসবজি এবং ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। চিনি এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন।

৮. দৃশ্যমান লক্ষ্য নির্ধারণ করা: নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে পড়ার আগ্রহ বাড়ে। লক্ষ্য নির্ধারণ মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে সক্রিয় করে। প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট পড়ার লক্ষ্য তৈরি করুন। লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে ছোট উপহার দিন।

৯. মস্তিষ্কের ক্লান্তি এড়াতে বিরতি নেওয়া: একটানা পড়ার ফলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়। মস্তিষ্ক বিরতি পেলে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। প্রতি ৪৫-৫০ মিনিট পড়ার পর ৫-১০ মিনিট বিরতি নিন। বিরতিতে হাঁটাহাঁটি করুন বা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন।

১০. বন্ধুর সাথে পড়াশোনা করা: একসাথে পড়লে পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। গ্রুপ স্টাডি সেশন মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন হরমোন বাড়ায়, যা আমাদের মানসিকভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। গ্রুপ স্টাডি সেশন পরিকল্পনা করুন।বন্ধুকে পড়ার সময় আপনার লক্ষ্য বলুন এবং তাকে আপনাকে দায়িত্বশীল রাখতে বলুন।

পড়তে ইচ্ছা বাড়ানোর জন্য মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধির কৌশলগুলোকে কাজে লাগানো জরুরি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পারে। সঠিক পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, এবং পরিকল্পিত রুটিন তৈরি করলে এই সমস্যা সমাধান সহজতর হয়।

পড়াশোনায় মন বসানোর জন্য কি করা উচিত

পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কাজের ধরন, দৈনন্দিন অভ্যাস, এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানো সম্ভব।

পড়াশোনায়_মন_বসানোর জন্য_কি_করা_উচিত

পড়াশোনায় মন বসানোর জন্য বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলো প্রয়োগ করা অত্যন্ত কার্যকর। সঠিক পরিকল্পনা, পরিবেশ, এবং মানসিক প্রস্তুতি পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পড়ার অভ্যাস তৈরি করলে সফলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

কিভাবে দীর্ঘ সময় পড়া যায়

দীর্ঘ সময় পড়াশোনা করা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এটি মূলত মস্তিষ্কের মনোযোগ ক্ষমতা, শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা, এবং দৈনন্দিন অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। সঠিক কৌশল, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পড়া সম্ভব। 

  • মস্তিষ্কের মনোযোগের সীমা বুঝুন: মানুষের মনোযোগ সাধারণত ২৫-৩০ মিনিট ধরে কেন্দ্রীভূত থাকে। এরপর মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে মনোযোগ হারাতে থাকে। প্রতিটি অধ্যয়ন সেশনের জন্য ২৫-৩০ মিনিট সময় নির্ধারণ করুন। প্রতিটি সেশনের শেষে ৫ মিনিটের বিরতি নিন।
  • পমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করুন: এই পদ্ধতিতে বিরতির মাধ্যমে মস্তিষ্ককে পুনরায় উদ্যমী করা হয়, যা দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। ২৫ মিনিট পড়ুন, তারপর ৫ মিনিট বিশ্রাম নিন। ৪টি সেশনের পর ১৫-২০ মিনিট বড় বিরতি নিন।
  • পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং হালকা খাবার খান: পানিশূন্যতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘক্ষণ কাজ করার শক্তি জোগায়। প্রতি ঘণ্টায় ১ গ্লাস জল পান করুন।বাদাম, ফল, বা হালকা স্ন্যাকস রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর বসার অবস্থান বজায় রাখুন: অস্বস্তিকর বসার অবস্থান মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন কমায়, যা ক্লান্তি বাড়ায়। পড়ার সময় সোজা হয়ে বসুন।আরামদায়ক টেবিল ও চেয়ার ব্যবহার করুন। প্রতি ৩০ মিনিটে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন।
  • পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন: শান্ত এবং আলোযুক্ত পরিবেশ মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য বিভ্রান্তি দূরে রাখুন। সঠিক আলো এবং তাপমাত্রা নিশ্চিত করুন। পড়ার জায়গা নিয়মিত পরিস্কার রাখুন।
  • পড়ার আগে ব্যায়াম করুন: ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং কর্টিসল হরমোন কমিয়ে ফোকাস উন্নত করে।পড়ার আগে ১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করুন। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।
  • বড় কাজকে ছোট অংশে ভাগ করুন: মস্তিষ্ক ছোট কাজ দ্রুত শেষ করতে সক্ষম, যা পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট অধ্যায় বা পৃষ্ঠা পড়ার লক্ষ্য রাখুন। কঠিন বিষয়গুলো ভাগ করে পড়ুন।
  • গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন এবং মেডিটেশন করুন: গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং মেডিটেশন স্ট্রেস কমায় এবং মনোযোগ উন্নত করে। পড়ার আগে এবং বিরতির সময় ২-৩ মিনিট গভীর শ্বাস নিন।মেডিটেশন চর্চা করুন, যা দীর্ঘমেয়াদে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন পড়ার কৌশল ব্যবহার করুন: বিভিন্ন পদ্ধতিতে পড়া মস্তিষ্কের মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি কমায়। চিত্র, নোট, বা ভিডিও টিউটোরিয়ালের সাহায্য নিন। পড়ার সময় রঙিন মার্কার ব্যবহার করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: ঘুম মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করে এবং দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। রাত জাগা এড়িয়ে সকালে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • নিজের লক্ষ্য লিখে রাখুন: লিখিত লক্ষ্য মস্তিষ্কে অনুপ্রেরণা তৈরি করে এবং পড়ার প্রতি উৎসাহ বাড়ায়। প্রতিদিনের লক্ষ্য একটি কাগজে লিখুন। লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন।

দীর্ঘ সময় ধরে পড়া সম্ভব করার জন্য বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, পরিবেশ, এবং অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এটি সহজেই সম্ভব। আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।

সারাদিন পড়াশোনা করার উপায়

সারাদিন পড়াশোনা করার জন্য শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত প্রস্তুতির প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখা মস্তিষ্কের জন্য কঠিন কাজ হলেও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি সহজ এবং কার্যকর করা সম্ভব। নিচে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও কৌশলসহ সারাদিন পড়াশোনার উপায় তুলে ধরা হলো।

  • পড়াশোনার পরিকল্পনা তৈরি করুন: পরিকল্পনা তৈরি করলে মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি করে। পড়ার জন্য দৈনিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। কঠিন বিষয়গুলো সকালে রাখুন এবং সহজ বিষয়গুলো বিকেলে বা রাতে পড়ুন। সময়সূচি তৈরি করে তা অনুসরণ করুন।
  • মোডোরো টেকনিক ব্যবহার করুন: পমোডোরো টেকনিক মস্তিষ্ককে ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখে। ২৫ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিট বিরতি নিন। ৪টি সেশন পরে ১৫-২০ মিনিটের বড় বিরতি নিন।
  • পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন: শান্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে মস্তিষ্ক কম বিভ্রান্ত হয়, যা দীর্ঘ সময় পড়তে সহায়তা করে। মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি দূরে রাখুন। একটি নির্দিষ্ট পড়ার স্থান ঠিক করুন। আলো এবং তাপমাত্রা সঠিক রাখুন। ব্যায়াম এবং মেডিটেশন কর্টিসল হরমোন কমায় এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়, যা মনোযোগ বৃদ্ধি করে। সকালে ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করুন। পড়ার আগে এবং বিরতির সময় গভীর শ্বাস নিন।
  • বিষয়গুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন: মস্তিষ্ক ছোট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পছন্দ করে। এটি পড়ার সময় চাপ কমায় এবং অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি করে। বড় অধ্যায়গুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন। একটি অংশ শেষ করার পর বিরতি নিন।
  • স্মার্ট স্টাডি পদ্ধতি ব্যবহার করুন: চিত্র, নোট, এবং ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক বিষয়গুলো সহজে মনে রাখতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হাইলাইট করুন। ফ্ল্যাশকার্ড তৈরি করুন। ডায়াগ্রাম এবং চিত্রের সাহায্যে পড়ুন।
  • নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখুন: নিজেকে উৎসাহিত রাখলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা পড়ার ইচ্ছা বাড়ায়। লক্ষ্য পূরণ হলে নিজেকে ছোট পুরস্কার দিন। প্রিয় বিষয় দিয়ে পড়া শুরু করুন। ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন।
  • প্রযুক্তির সহায়তা নিন: শিক্ষামূলক অ্যাপ এবং ভিডিও টিউটোরিয়াল মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। ইউটিউব বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিউটোরিয়াল দেখুন। সময় মাপার জন্য অ্যাপ ব্যবহার করুন। 

সারাদিন পড়াশোনা করার জন্য শারীরিক, মানসিক, এবং পরিবেশগত প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে দীর্ঘ সময় পড়া সহজ হয় এবং মস্তিষ্ক ক্লান্তি ছাড়াই কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, নিয়মিত বিশ্রাম, এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।

কিভাবে অতিরিক্ত চিন্তা বন্ধ করে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা যায়

অতিরিক্ত চিন্তা বা ওভারথিঙ্কিং একটি মানসিক অবস্থা যেখানে মস্তিষ্ক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। এটি পড়াশোনার মনোযোগে বাধা সৃষ্টি করে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কৌশলগুলোর মাধ্যমে অতিরিক্ত চিন্তা কমিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া সম্ভব।

  • মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করুন : মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বাড়ায়। এটি অ্যামিগডালা (মস্তিষ্কের মানসিক প্রতিক্রিয়ার অংশ) সক্রিয়তা কমিয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।পড়াশোনার আগে ৫-১০ মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন। বর্তমান মুহূর্তের দিকে মনোযোগ দিন এবং অতীত বা ভবিষ্যৎ চিন্তা এড়িয়ে চলুন। চিন্তা এলেই তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে ফিরিয়ে আনুন।
  • ওভারথিঙ্কিং এর ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করুন : ওভারথিঙ্কিং সাধারণত নির্দিষ্ট চিন্তার মাধ্যমে সক্রিয় হয়। এই ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করে মস্তিষ্ককে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করা যায়। কোন চিন্তাগুলো বারবার মনে আসছে তা লিখে ফেলুন। কীভাবে সেই সমস্যাগুলো সমাধান করা যায় তা বিশ্লেষণ করুন। পড়াশোনার সময় চিন্তা এলেই একটি নির্ধারিত নোটবুকে তা লিখে রেখে আবার পড়ায় মনোযোগ দিন।
  • মেডিটেশন অভ্যাস করুন: মেডিটেশন স্ট্রেস কমায় এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশ) সক্রিয় করে। এটি চিন্তার ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। দিনে ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন। মেডিটেশন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। মন শান্ত হলে পড়াশোনা শুরু করুন।
  • নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন: অনুভূতি চেপে রাখলে মানসিক চাপ বাড়ে, যা অতিরিক্ত চিন্তার কারণ হতে পারে। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলে মানসিক চাপ কমে। ডায়েরিতে নিজের চিন্তা লিখুন। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলরের পরামর্শ নিন।
  • তথ্য সংগ্রহের পরিবর্তে গভীরভাবে চিন্তা করুন : তথ্য সংগ্রহের পরিবর্তে বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে মস্তিষ্ক একক চিন্তায় ফোকাস করে। পড়ার সময় একটি বিষয় পুরোপুরি শেষ করার চেষ্টা করুন। পড়া শেষ হলে তার সারাংশ নিজের ভাষায় লিখুন। নতুন কিছু শেখার জন্য কৌতূহলী থাকুন।

অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায়গুলো অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। মাইন্ডফুলনেস, পরিকল্পনা, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, এবং ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। এভাবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং সফলতা অর্জন সহজ হবে।

পড়ার সময় অন্য কিছু ভাবা বন্ধ করার উপায়

পড়ার সময় মনোযোগ ধরে রাখা অনেকের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। মস্তিষ্ক প্রায়ই একাধিক চিন্তা করতে চায়, যা মনোযোগ নষ্ট করে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ও নিউরোলজিক্যাল উপায় অবলম্বন করলে পড়ার সময় অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা এড়ানো সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ নতুনদের জন্য ইংরেজি শিখার ১০ টি সহজ উপায়

মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন: মাইন্ডফুলনেস মস্তিষ্কের অ্যামিগডালার কার্যকলাপ কমিয়ে এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সক্রিয় করে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি বর্তমান কাজের উপর ফোকাস বাড়ায় এবং অন্য চিন্তা দূর করে। পড়ার আগে ৫-১০ মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন। যদি পড়ার সময় মন অন্য দিকে চলে যায়, তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন এবং ধীরে ধীরে পড়ায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন। একটি শব্দ বা বাক্যে ফোকাস করার চেষ্টা করুন, যেমন "পড়া গুরুত্বপূর্ণ।"

ব্রেইন ট্রেনিং এর মাধ্যমে মনোযোগ বৃদ্ধি: মনোযোগকে শক্তিশালী করতে মস্তিষ্কে সেরেব্রাল কর্টেক্স সক্রিয় করা প্রয়োজন। ব্রেইন ট্রেনিং গেম বা কগনিটিভ এক্সারসাইজ মনোযোগ বাড়াতে কার্যকর। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেমোরি বা ফোকাস গেম খেলুন। "পমোডোরো টেকনিক" ব্যবহার করুন: ২৫ মিনিট পড়া, ৫ মিনিট বিরতি। এটি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা এড়াতে একক কাজ (Single Tasking) করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ওভারথিঙ্কিং নিয়ন্ত্রণ করুন: ওভারথিঙ্কিং আমাদের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যা মনোযোগ নষ্ট করে। মস্তিষ্ককে "Problem-Solving Mode" এ আনলে ওভারথিঙ্কিং কমে। কোন চিন্তা বারবার মনে এলে তা একটি নোটবুকে লিখে রাখুন। সমস্যাগুলোর সমাধান পরে খুঁজবেন এমন সিদ্ধান্ত নিন। পড়ার আগে নিজের চিন্তা পরিষ্কার করতে ৫ মিনিট সময় দিন।

নিজেকে প্রেরণা দিন: ইতিবাচক মনোভাব মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। সঠিক প্রেরণা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও অক্সিটোসিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা একাগ্রতা বাড়ায়। পড়ার পরে নিজেকে ছোট পুরস্কার দিন। "কেন পড়া গুরুত্বপূর্ণ?" এই প্রশ্নের উত্তর নিজেকে দিন। নিজের ছোটো অর্জনগুলো উদযাপন করুন।

পড়ার সময় অন্য কিছু ভাবা বন্ধ করতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কৌশলগুলো কার্যকর। মাইন্ডফুলনেস, লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, এবং মেডিটেশন আপনাকে মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক হবে। নিয়মিত অভ্যাস ও সঠিক কৌশলের মাধ্যমে পড়ার সময় অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়

ইসলামের শিক্ষা মানুষকে জীবনব্যাপী জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহিত করে। পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে ইসলামিক কিছু নীতি ও উপায় অনুসরণ করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়া সম্ভব। নিচে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর জন্য ইসলামিক উপায়গুলো বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হলো।

পড়াশোনায়_মনোযোগী_হওয়ার_ইসলামিক_উপায়
  1. নিয়ত (ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য) বিশুদ্ধ করা: ইসলামে যে কোনো কাজের সফলতার জন্য সঠিক নিয়ত করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আমলসমূহ নির্ভর করে নিয়তের উপর।" (সহীহ বুখারি)। পড়াশোনা শুরু করার আগে নিয়ত করুন যে এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছেন।মনে রাখুন, জ্ঞান অর্জন একটি ইবাদত এবং এটি আপনার দায়িত্ব। সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে পড়ার ফলে কাজে বারাকাহ আসে।
  2. নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়া: নিয়মিত নামাজ পড়লে মন ও মস্তিষ্ক শান্ত থাকে, যা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “নিশ্চয়ই নামাজ অসভ্যতা ও অন্যায় থেকে দূরে রাখে।” (সুরা আনকাবুত: ৪৫)। পড়ার সময় নামাজের জন্য সময় বরাদ্দ করুন। নামাজের পরে বিশেষ দোয়া করুন যেন পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন।
  3. সকালবেলা পড়াশোনা শুরু করা: সকালবেলা কাজ শুরু করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) দোয়া করেছেন, “আমার উম্মতের জন্য সকালবেলা কাজকর্মে বারাকাহ দাও।” (আবু দাউদ)। ফজরের নামাজের পর কিছু সময় পড়াশোনার জন্য নির্ধারণ করুন। সকালে মন সতেজ থাকে এবং পড়া সহজে মনে থাকে। দিনের শুরুতেই কঠিন বিষয়গুলো পড়ুন।
  4. আল্লাহর কাছে দোয়া করা: জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনে বলা হয়েছে, “হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।” (সুরা ত্বা-হা: ১১৪)। পড়াশোনার আগে এবং পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়া পড়ুন: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া।” অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে উপকারী জ্ঞান দান করুন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে মনে আত্মবিশ্বাস আসে।
  5. হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা: হারাম কাজ যেমন মিথ্যা বলা, অন্যায় করা, বা সময় নষ্ট করা জ্ঞান অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছেন, "আমি আমার শিক্ষকের কাছে স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য পরামর্শ চেয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন, ‘পাপ থেকে বেঁচে থাকো।’" সময় নষ্টকারী অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকুন। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর নাফরমানি এড়িয়ে চলুন। পবিত্রতা বজায় রাখুন এবং সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগান।
  6. পবিত্রতা বজায় রাখা: পবিত্রতা ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্র মন ও শরীর জ্ঞানার্জনে সাহায্য করে। পড়াশোনা শুরু করার আগে অজু করুন। পঠনস্থল পরিচ্ছন্ন রাখুন। পবিত্র অবস্থায় থাকলে মস্তিষ্ক কার্যকর থাকে।
  7. ধারাবাহিকতা বজায় রাখা: ইসলাম ধারাবাহিকতার উপর জোর দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হল তা যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প।” (সহীহ বুখারি)। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়ার অভ্যাস করুন। একবারে বেশি পড়ার চেষ্টা না করে পর্যায়ক্রমে পড়ুন। নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে মনোযোগ ধরে রাখুন।
  8. পরিবার এবং শিক্ষকের দোয়া গ্রহণ করা: পরিবার এবং শিক্ষকের দোয়া আল্লাহর বিশেষ রহমত ডেকে আনে। পিতা-মাতার দোয়া জীবনের বড় সাফল্যের কারণ হতে পারে। পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ করুন এবং তাদের দোয়া নিন। শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। তাদের সাহায্য ও দোয়া জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে।
  9. শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচা: শয়তান সবসময় মানুষকে বিভ্রান্ত করে। কুরআনে বলা হয়েছে, “শয়তান তোমাদের দুশমন, সুতরাং তাকে দুশমন মনে করো।” (সুরা ফাতির: ৬)। পড়ার সময় কোনো নেতিবাচক চিন্তা আসলে “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” পড়ুন। আল্লাহর জিকির বেশি বেশি করুন। শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত নামাজ ও কুরআন পাঠ করুন।
  10. ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা: পড়াশোনায় সফলতার জন্য ধৈর্য ও নিয়মানুবর্তিতা অপরিহার্য। কুরআনে বলা হয়েছে, “ধৈর্যশীলদের জন্য বিরাট প্রতিদান রয়েছে।” (সুরা যুমার: ১০)। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ধৈর্য হারাবেন না। কোনো বিষয় কঠিন মনে হলে ধীরে ধীরে চেষ্টা করুন। সবকিছু আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কাজ করুন।

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য ইসলামিক উপায়গুলো অত্যন্ত কার্যকর। নিয়ত বিশুদ্ধ করা, নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়া, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব। নিয়মিত ইসলামিক পদ্ধতি চর্চা করলে শুধু পড়াশোনাই নয়, জীবনের সবক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

শেষ বিশ্লেষণ : লেখকের মন্তব্য

পড়াশুনা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই পড়াশুনা করতে পারিনা। আমাদের সকলের উচিত ধৈর্য সহকারে উপরোক্ত টিপসগুলো মেনে পড়াশুনা করা। ধৈর্য সহকারে পড়াশোনা করতে হবে তাহলে, পড়াশুনা করে অভ্যাসে পরিণত হবে।
পড়াশোনা করা সহজে সম্পাদন হবে। কারণ আমাদের জীবনে পড়াশুনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পড়াশুনা করলে আমাদের মানসিক বিকাশ লাভ পায়। আমারা ধৈর্যের মাধ্যমে পড়াশুনা করার অভ্যাসে পরিণত করতে পারবো। এবং জীবন সহজভাবে সম্পাদন করতে পারবো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সহায়তা আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url